করনা ভাইরাসের আতঙ্ক এখনো মুছে যায়নি মানুষের মন থেকে, এরইমধ্যে এক নতুন সংযোজন মাংকিপক্স ভাইরাস। 2022 এর মে মাসের শুরুর দিকেই যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের নাইজেরিয়া ভ্রমণ করে ফেরার পর থেকেই এই রোগের লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে তার শরীরে এবং তারপর থেকেই সংক্রমিত হতে শুরু করেন বহু মানুষ। সম্প্রতি ভারতেও মাঙ্কি পক্স এর প্রথম কেসটি ধরা পড়েছে কেরালার কোল্লাম এ। বছর ৩৫ এর ওই আক্রান্ত ব্যাক্তি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে থেকে ফেরার পরেই তার শরীরের রোগ লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। আক্রান্ত ব্যাক্তি বর্তমানে তিরুবন্তপুরমের একটি হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কী এই মাঙ্কিপক্স?
প্রথম মাঙ্কি পক্স ধরা পড়ে ডেনমার্কের পরীক্ষাগারের বানর গুলির মধ্যে ১৯৫৮ সালে। এরপর মালয়েশিয়া, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ার বানরদের মধ্যেও এই রোগটি ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে বানরের দেহে ধরা পড়লেও মাঙ্কি পক্স বা বাঁদর বসন্ত হলো এমন একটি সংক্রামক রোগ যা মানুষ সহ বিভিন্ন কিছু প্রাণীর দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
কিভাবে সংক্রমিত হতে পারে মাঙ্কিপক্স?
মাংকি পক্স কেবলমাত্র বাঁদর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে এমন ভাবার কোন কারণ নেই। বাঁদর ছাড়াও বিভিন্ন বন্য জন্তু এবং ইঁদুর, কাঠবিড়ালি ইত্যাদি সহ মানুষ থেকে মানুষেও মাঙ্কি পক্স এর সংক্রমণ ঘটতে দেখা গিয়েছে। মূলত বন্য প্রাণীর মাংস ভক্ষণ , পশুর কামড় বা আঁচড় থেকেই এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে অপর মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। মাংকি পক্স বায়ুবাহিত রোগ নয়। কেবলমাত্র সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে তবেই এই রোগ সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বা শারীরিক সম্পর্কভুক্ত অপর ব্যক্তিকে থাকতে বলা হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা , পোশাক এবং ব্যবহার্য সমস্ত জিনিসের সংস্পর্শে অন্য ব্যক্তির এসময়ে না আসাই বাঞ্ছনীয়।
কিভাবে নির্ণয় করা হবে মাঙ্কিপক্স?
ডিএনএ পরীক্ষা এবং পার্থক্যমূলক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে এই রোগটি চেনা যায়।
মাংকিপক্সের রোগ লক্ষণ গুলি কি কি?
জ্বর , মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা এবং ফোলা লিম্ফ নোড হল এই রোগের লক্ষণ। প্রাথমিকভাবে দুর্বল অনুভব করা থেকে জ্বর আসার মধ্যে দিয়ে রোগটি আগমন বার্তা জানান দেয়।
এরপর একটি একটি করে ফোস্কার মত কঠিন আবরণযুক্ত লিম্ফ সৃষ্টি হয়। এই রোগটির সূত্রপাত ঘটে রোগ লক্ষণ গুলি প্রকাশিত হওয়ার 5 থেকে 21 দিন পর এবং এই রোগটির স্থিতিকাল দুই থেকে চার সপ্তাহ।
কিভাবে করা যেতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ?
আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই হোম কোয়ারেন্টাইন এ থাকতে হবে। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র অপর কাউকে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
রোগীর ঔষধ হিসাবে গুটি বসন্তের টিকা 85% কার্যকরী। এছাড়াও টোকোভিরিম্যাট, জিনিওস ইত্যাদি প্রতিষেধক গুলো ব্যবহার করেও এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।
কতটা ভয়ঙ্কর এই বাঁদর বসন্ত?
সারা বিশ্বজুড়ে এই রোগে আক্রান্ত মৃত্যুর হার বেশী নয় তবে রোগ নির্ণয়ে গাফিলতি এবং চিকিৎসার অভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা করোনা ভাইরাস এর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি আশঙ্কা করছেন না এখনি। তবে তাদের মতে, সতর্ক থাকা এবং জরুরী অবস্থার জন্য তৈরী থাকাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য করোনা ভাইরাস ঘটিত জরুরী অবস্থা থেকে ভিন্ন রকম প্রস্তুতি বিশেষজ্ঞরা নিচ্ছেন। কারণ তাদের মতে মাঙ্কি পক্স করোনা ভাইরাস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি রোগ।
পরিশেষে, এই রোগটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা আতঙ্কিত হবার চেয়ে বেশী সতর্ক থাকবার পরামর্শ দিয়েছেন। আক্রান্ত ব্যাক্তি রোগ নিবারনের সকল নিয়ম মেনে চললে এবং তার সঠিক চিকিৎসা হলে মাংকি পক্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা কঠিন কিছু নয়।
লিখেছে- নিতা দে
নতুন খবর এবং টেকনিকাল খেলাধুলা জ্ঞান মূলক তথ্য জানতে হলে আমাদের নোটিফিকেশন বেলটি Allow করতে ভুলবেন না এবং আমাদের সাথে জুড়ে থাকবেন