বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার ক্যাভিয়ার, তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর সময়ে এটা ছিল অত্যন্ত সাধারণ খাবার। এটি হলো সামুদ্রিক মাছের ফার্টিলাইজিন যেটা কাঁচা লবণ মাখিয়ে খেতে হয়।
প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত খাবারের মধ্যে সবচেয়ে দামী খাবার হল ক্যাভিয়ার। এটা এসিফিন সরিডি প্রজাতির অন্তর্গত স্টার্জিয়ন (Sturgeon) মাছের ডিম। বিলাসবহুল খাবারের মধ্যে এটি অন্যতম, এই খাবারের এতটাই দামি, যা সোনার বাটিতে পরিবেশন করা হয়। ১কেজি ক্যাভিয়ার এর দাম ৩০ হাজার মার্কিন ডলার বা তারও বেশি। এই খাবারের অত্যাধিক দামের কারণ হলো ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাহিদা ও স্টার্জিয়ন মাছের পরিমান কম থাকায়।
ক্যাভিয়ার বর্ন:
এই খাবার সাধারন মানুষের কেনা সাধ্যের বাইরে। প্রজাতি অনুযায়ী ক্যাভিয়ার রং আঁকার বিভিন্ন হয়ে থাকে। কালো ,হলুদ , সবুজ, ধূসর, বাদামি, কমলা ও গারো হলুদ হয়ে থাকে। কালো ক্যাভিয়ার সবচেয়ে দামী হয়ে থাকে।
ক্যাভিয়ার কোথায় পাওয়া যায়?
শুধুমাত্র কাস্পিয়ান উপসাগর ও কৃষ্ণসাগর এ এই মাছ পাওয়া যায়। বেশিরভাগ এই মাসের যোগান পাওয়া যায় কাস্পিয়ান সাগর থেকে, শতকরা প্রায় 90 শতাংশ। প্রাচীন যুগে ক্যাভিয়ার উৎপাদন স্থান ছিল মধ্যপ্রাচ্য এবং রাশিয়া। বর্তমানে ক্যাভিয়ার সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করে চীনের ফার্ম থেকে। বেলুজা স্টার জিও মাছ থেকে সবচেয়ে সুস্বাদু ও দামি ক্যাভিয়ার। একটি পূর্ণবয়স্ক তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় কুড়ি বছর। প্রায় 26 প্রজাতির ক্যাভিয়ার পাওয়া যায়।
Read More: KK তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন কলকাতায়
ক্যাভিয়ার কিভাবে সংগ্রহ করা হয়?
এই মাছ থেকে ডিমকে আন -থার্টিলাইজড অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়। আগের সময়ে মাছ মেরে মাছের পেটে ডিম সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু এই সময়ে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণ এ মাছ না মেরেও ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। বছরের অন্যান্য সময় এরা সমুদ্রের নোনা জলে থাকে,ডিম পাড়ার সময় এরা নদীর সাধু জল চলে আসে। তখনই ডিম সংগ্রহ করার জন্য এই মাছ শিকার করা হয়।
ক্যাভিয়ার সংরক্ষন:
ক্যাভিয়ার প্রস্তুত করার সময় ডিম গুলোকে খুব সাবধানে আগলা করা হয়।যাতে এগুলি গলে না যায় বা একটার সঙ্গে আর একটা না লেগে থাকে।এটি কাঁচা পরিবেশন করা হয় তাই এটাকে খুব সতর্কভাবে সংগ্রহ করা হয় যাতে কোন ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে না পারে। ক্যাভিয়ার সংরক্ষন করতে দুই থেকে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখা হয় এর থেকে বেশি দিনের জন্য রাখার জন্য তাপমাত্রা কমিয়ে ফ্রজেন অবস্থায় রাখা হয়।
Another Post: ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায়
ক্যাভিয়ার কি কি রয়েছে?
প্রতি 100 গ্রাম ক্যাভিয়ারে 71 ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক বেশি। ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড ও আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করে এই ক্যাভিয়ার ,এই ক্যাভিয়ার ক্রয় করে পশ্চিমা দেশের মানুষেরা।
শেক্সপিয়ারের কাল জয়ী নাটক হেমলিটে ক্যাভিয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর আগমন ঘটেছিল প্রায় 22 কোটি বছর আগে। ক্যাভিয়ার আরো নামে ডাকা হতো, যার রাশিয়ান জেলেদের নামে নামকরণ করা হয়। ক্যাভিয়ার এই সময় অত্যন্ত বিলাসবহুল খাবার। কিন্তু আগের সময়ে এটি সাধারণের খাবার ছিল।
900 বছর আগে আমেরিকান হোটেল গুলিতে ক্যাভিয়ার বিনামূল্যে দেওয়া হতো যা প্রায় বাদামের তুল্য। বর্তমানে এই মাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং মাছের পরিমাণ বিলুপ্ত হওয়ার এটিকে না বা খাওয়া সাধারন মানুষের কাম্য নয়।
ক্যাভিয়ার কিভাবে পরিবেশন করা হয়:
এই খাবারের দাম যেহুতু অত্যাধিক তাই এর পরিবেশনটা রাজকীয় ভাবে করা হয়। রেস্টুরেন্ট গুলোতে 24 ক্যারেট সোনার বক্সের মধ্যে অথবা মুক্তের ওপর সাজিয়ে ক্রেতাকে দেওয়া হয়। প্রত্যেক বাটিতে 50 থেকে আড়াইশো গ্রাম পর্যন্ত ক্যাভিয়ার দেওয়া থাকে। দামি ধাতুর চামচ, টোস্ট বা সুশী এর সাথে পরিবেশন করা হয়। কেউ কেউ আবার পার্টিতে হুইস্কি সাথে ক্যাভিয়ার খেতে পছন্দ করে। ব্ল্যাক ক্যাভিয়ার বর্তমানে ইরানীয় কোম্পানি আলমাস ক্যাভিয়ারে পাওয়া যায়।
ক্যাভিয়ার অত্যাধিক চাহিদার জন্য অনেক প্রজাতি বর্তমানে বিলুপ্ত পূর্ণ, এদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বেলুড়ে স্টার্জিয়ন। এই মাছ কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতের চিরকালের জন্য বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এই মাছ। তাই প্রযুক্তিগত ভাবে কিভাবে মাছ না মেরে ডিম বার করা যায় সেই দিকে বেশি নজর দেওয়া দরকার। শুধুমাত্র বিলাসিতার জন্য এই মাছ কে ধ্বংস করে দেওয়া খুবই একটি খারাপ কাজের মধ্যে পড়ে।কোনোভাবেই আমরা এই ডিম ও মাছ দুটো কি হারিয়ে ফেলবো।
নতুন খবর এবং টেকনিকাল খেলাধুলা জ্ঞান মূলক তথ্য জানতে হলে আমাদের নোটিফিকেশন বেলটি Allow করতে ভুলবেন না এবং আমাদের সাথে জুড়ে থাকবেন।