ফেমিনিজম, ইকুয়ালিটি, মেন্টাল হেলথ ,হিউম্যান রাইটস – ইত্যাদি শব্দগুলোর সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বা ব্যবহারিক জীবনে আমরা পরিচিত। কিন্তু এমন এক দেশের কথা কল্পনা করুন যেখানে পুরুষ হীন নারীর একা চলাফেরা করার শাস্তি মৃত্যু, যেখানে নারীকে পণ্যের মতোই বিক্রয় করা হয়,যেখানে পুরুষের অধিকার আছে একসঙ্গে দুই বা ততোধিক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার,যেখানে নারীর শিক্ষার অধিকার হারাম এবং এত কিছু মেনে চলার পরেও নিশ্চিত হয় না তাদের সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ জীবনের অধিকার।
হ্যাঁ , আফগানিস্তানের কথাই বলা হচ্ছে।
কখনো ধর্মের দোহাই কখনও রাজনীতির নাগপাশে এভাবেই তালিবানি শাসন শ্বাসরুদ্ধ করে প্রায় মৃত করে রেখেছে আফগানিস্তানের নাগরিক বিশেষত নারীদের জীবনকে।
১৯৯৬ – ১৯৯৭ এর আফগানিস্তান:
দীর্ঘ সময় ধরে আফগানিস্তানে কমিউনিজম ও ইসালমপন্হার মধ্যে যুদ্ধ চলছিল।
1996 খ্রিস্টাব্দে কাবুলের পতন হলে আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তার 90% অংশ তালিবানদের দখলে চলে আসে এবং শুরু হয় নাগরিকদের দুর্দিন। তালিবানরা ওসামা বিন লাদেন এবং আলকায়দার মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং সারা দুনিয়া জুড়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানোয় সহায়তা করতে থাকে।
1997 এর অক্টোবরে তালিবানদের দ্বারা আফগানিস্থান একটি ইসলাম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পায়। দীর্ঘ যুদ্ধ ক্লান্ত সাধারণ নাগরিক মনে করে অশান্তির বুঝি এই শেষ। কিন্তু সন্ত্রাস প্রিয় তালিবানরা একটু একটু করে শ্বাসরুদ্ধ করতে শুরু করে আফগানিস্তানের জনজীবন। তাদের ধর্মীয় উগ্রতা, অশিক্ষা এবং অযৌক্তিকতার কবলে পড়ে একটু একটু করে শেষ হয়ে যায় আফগানিস্তানের সংস্কৃতি,
শিল্প-সাহিত্য সর্বোপরি নারীদের আকাশ দেখার অধিকার। শিক্ষা, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তো দূরে থাক নারীরা যেভাবে পুরুষের হাতে লাঞ্ছিত হতো তা দেখে কেঁপে উঠতো আপামর মানব সভ্যতা।
সে সময়ে আফগানিস্তানের ইতিহাসে এমন ঘটনার সংখ্যা নেহাত কম নয় যেখানে নারী অসুস্থতায় ভুগে বা সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। কারণ তালিবানরা পুরুষ চিকিৎসকদের কাছে নারীদের চিকিৎসা করানোকে হারাম ঘোষণা করেছিল।
এদিকে কেড়ে নিয়েছিল নারীদের শিক্ষার অধিকার। ফলত, মৃত্যুই ছিল নারীর একমাত্র মুক্তির পথ। 2001 সালে মার্কিনরা সাময়িকভাবে তালিবানদের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিল।
অগ্নিবীরদের চার বছর পর ভবিষ্যৎ কি? বিস্তারিত জানুন
ডাক বিভাগে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষনা
তালিবানি পুনরাবর্তন ( ২০২০-২১):
এরপর 2003 সালে মোল্লা ওমরের হাতে তালিবান পুনর্গঠিত হতে শুরু করে।2011 – 12 সালে তালিবানি সৈন্যদের সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়ায়। এরপর ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবান শান্তি পত্র স্বাক্ষর করে। সেই শান্তি চুক্তি অনুযায়ী মার্কিনরা 14 মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তাদের মোতায়ন করা সেনা সরিয়ে নেবে এবং আফগানিস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনরকম সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপকে সমর্থন করবে না। তালিবানরা কোনরকম শান্তি চুক্তিতে সন্মত ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেনা প্রত্যাহারের সময় পিছিয়ে দিলে, তালিবানরা আফগানিস্থান আক্রমণ করে এবং দখল করে(২০২১) এবং যুদ্ধ শেষের ঘোষণা করা হয় তাদের দ্বারা।
যুদ্ধ শেষে কেমন রইল আফগানিস্থানের নাগরিক?
তালিবানরা বিজয় ঘোষণা করার পর বিভিন্ন সূত্রে যে ভয়ানক খবর গুলি খবরের কাগজের পাতায় কিংবা ড্রইংরুমে টিভি স্ক্রীনে ভেসে উঠতে শুরু করে সেগুলি সভ্যতার লজ্জা,মানবতার কলঙ্ক। যেমন – আফগানিস্তানের নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে যোগান দেওয়া হচ্ছে তালিবানি সৈন্যদের। হাজার হাজার মানুষ প্রাণভয়ে বিমানের মাথায় চড়ে পালিয়ে আসছে দেশ ছেড়ে, 10 বছর বয়সী বালিকা এবং তার মাকে যথেচ্ছভাবে গুলি করে মারছে তালিবানি সৈন্য, ইতিমধ্যেই খারিজ হয়েছে নারীর সমান শিক্ষার অধিকার, খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার অধিকার। এমনকি তালিবানিদের নির্লজ্জ কন্ঠস্বর ঘোষনা করতে পিছপা হয় না যে তালিবানি সৈন্যরা এখনো অবধি নারীদের সম্মান করতে শেখে নি, তাই নারীদের জন্য এটাই ভাল হবে যে তারা ঘর বন্দী থাকে।বহুল প্রতিবাদের পর তারা নারী শিক্ষার অধিকারকে সম্পূর্ণ অস্বীকার না করলেও নারী ও পুরুষের একসঙ্গে শিক্ষার অধিকারকে খারিজ করে।
বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও আফগানিস্থানের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী হলেও মন্ত্রিসভায় কোন নারীকে স্থান দেওয়া হয় না-জন্মদানই নাকি নারীর একমাত্র অবশ্য কর্তব্য!
কিছুদিন আগে সংবাদপত্রে এমন একটি খবর উঠে এসেছিল যেখানে বলা হচ্ছে আফগানি নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে উঠেছে। ৯ বছর বা তার কম বয়সী শিশু কন্যাকেও বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে পুরুষতন্ত্রের স্বর্গরাজ্যে। কারনটা অর্থনৈতিক দুর্দশা। সেদেশে এটা স্বাভাবিক,এর বেশী কিছু হবার নেই একথা হতভাগ্য পরিবার এবং সেই মেয়েরা জানে। তাই, এই অন্ধকার ভবিষ্যতে পা রাখার থেকে মৃত্যুকেই শ্রেয় বলে মনে করছে আফগানি মেয়েরা।
পরিশেষে –
একটি দেশ তার আর্থসামাজিক অবস্থা ,তার যুদ্ধের ইতিহাস ইত্যাদি বিশ্লেষণ করলে যা নীতিকথা দাঁড়ায় তা হল –
“রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।”
যুদ্ধ ,তালিবানি আক্রমণ, ধর্মীয় সংকীর্ণতা
ইত্যাদির কবলে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আফগানিস্তানের সাধারণ জনজীবন এবং প্রধানত নারীরা। ধর্মীয় মুখোশধারী পুরুষতন্ত্রের পদপৃষ্ট হয়ে তারা চিরকাল মরেছে আতঙ্কের ভূমিতে।
তবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রাপ্ত কিছু ছবি যাতে দেখা যাচ্ছে শিরদাঁড়া সোজা করে একদল নারী হাতে তুলে নিয়েছেন বন্দুক, প্রতিবাদকে পাথেয় করে নির্ভয় এসে দাঁড়িয়েছেন তালিবানদের উদ্ধত বন্দুকের সামনে। বর্বরতার কালো মেঘ ফুঁড়ে যেন এক চিলতে নীল আকাশের উঁকি। এই বিদ্রোহিনীদের হুংকারেই ধ্বনিত হয় সুস্থ- স্বাভাবিক আফগানিস্তানের স্বপ্ন।
W- Nita Dey
নতুন খবর এবং টেকনিকাল খেলাধুলা জ্ঞান মূলক তথ্য জানতে হলে আমাদের নোটিফিকেশন বেলটি Allow করতে ভুলবেন না এবং আমাদের সাথে জুড়ে থাকবেন।